কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে
বাস যোগে--> ঢাকা হতে বরিশাল হয়ে লেবুখালী ফেরি পার হয়ে দুমকি উপজেলার উপর দিয়ে জোয়ার গরবদি ও বগা ফেরি পার হলেই ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বাউফল সদর উপজেলা কার্যালয় অবস্থিত। উপজেলা কার্যালয় হতে পূর্ব দিকে ৪ কিঃমিঃ দূরে কালাইয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের শৌলা গ্রামে অবস্থিত।
লঞ্চ যোগে -->ঢাকা হতে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী পাড়ি দিয়ে সরাসরি কালাইয়া বন্দর। সেখান থেকে উক্ত ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের শৌলা গ্রামে অবস্থিত।
কালাইয়া ইউনিয়নের উত্তর শৌলা গ্রামে নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘষেটি বেগমের নামে এ মসজিদ। মসজিদটি বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন। পলাশীর যুদ্ধকালীন সময়ে ঘষেটি বেগম নিজে অথবা উনার কোন আপনজন এখানে এসে এই দালান তৈরী করে আশ্রয় নিয়েছেন বলে অনুমান করা হয়।
১৭৯০ সালে বাউফল থানার পত্তন হলেও আজ অবধি এই নাম নিজ মহিমায় ভাস্বর। এর রয়েছে অতীত ইতিহাস। ১৩২০খ্রিঃ রাজা দনুজমর্দন দেব চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অধঃস্তন ৫ম পুরুষ রাজা জয়দেবের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। কমলা ও বিদ্যাসুন্দরী নামে তার দুই কন্যা ছিল। রাজা কন্যাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেন। কন্যাদের মধ্যে কমলা দেবী ছিলেন প্রতিভাময়ী। পিতার নির্দেশে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা, অস্ত্রচালনা, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় জ্ঞান লাভ করেন। রাজা জয়দেব কমলা দেবীকে বাবুগঞ্জ থানার দেহেরগতি গ্রামে উষাপতির পুত্র বলভদ্র বসুর সাথে বিবাহ দেন। রাজা জয়দেব মেয়ে ও জামাতার জন্য গলাচিপায় রাজপ্রসাদ নির্মাণ করে দেন। বলভদ্র বসু দেখতে কাল ছিলেন বলে তাকে প্রজারা কালারাজা বলে ডাকতেন। গলাচিপায় কাল রাজার বিল আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে। ১৭৬৩ সালের ভূমিকম্পে কালা রাজার বাড়ীসহ গ্রামটি ডেবে যায়। রাজা জয়দেব মারা যাবার পর মেয়ে জামাতা বাউফলের বাকলার রাজবাড়ীতে এসে বসবাস শুরু করেন। ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে কমলা দেবী সিংহাসনে আরোহন করেন। রানী কমলা দেবীর স্মৃতি বহন করে আছে কালাইয়া ইউনিয়নে কমলার দীঘি। যার নির্মাণকাল ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে। কমলার দীঘি ভরে গেছে। দীঘির পূর্বপাড় তেতুঁলিয়া নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে চর পড়েছে। দীঘির পাড়গুলো এখনও ২০/২৫ ফুট উঁচু। পাড়ের উপর গড়ে উঠেছে জনবহুল গ্রাম। গ্রামের নাম শৌলা। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ বেভারিজ এই দীঘি পরিদর্শন করেন। মিঃ বেভারিজ রানীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘কমলা এই জেলায় কীর্তির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। জলাভূমির মাঝে উঁচু পাড়গুলোর উপর ঘর-বাড়ী দেখে সত্যিই আনন্দ লাগে এবং এগুলোর অধিবাসীরা তাদের সুখ ও ঐশ্বর্যের জন্য বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক রাজকন্যার কাছে ঋণী’’।
উপজেলা সদরের পশ্চিমে আছে বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস বাজার। ব্রিটিশ আমলে বাংলার বাঘ নামে পরিচিত এ,কে, ফজলুল হকের পিত্রালয় ছিল বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের কাজী বাড়ীতে। তাঁরই নামানুসারে বিলবিলাস বাজার থেকে নওমালা রাস্তার সাথে জৌতায় গিয়ে ‘শেরে বাংলা’ রোড নামে মিলিত হয়েছে।
বৃটিশ শাসনামল থেকেই বগা ছিল চাউল ব্যবসার জন্য সু-প্রসিদ্ধ। এখানে বালাম চাউল তৎকালীন বাংলা ও ভারতবর্ষের সর্বত্র চালানো হত। এখানে রয়েছে প্রচীন কালের বিখ্যাত খাদ্য গুদাম।
উপজেলার পশ্চিমে আছে প্রাচীন কালের বিখ্যাত খাদ্য গুদাম। উত্তরে কাছিপাড়া ইউনিয়নের বলাই কানাইর দিঘী সেখানে হিন্দু ধর্মালম্বীগণ দুধ কলা দিয়ে পূজা করত। তাছাড়া ইখতিয়ার খাঁর দিঘী, ধজের দিঘী ও বিখ্যাত হিন্দু জমিদারের দুই মেয়ে কালি ও শুরীর নামানুসারে কালিশুরী বন্দরের নামকরণ করা হয়। এখানে সায়েদুল আরেফিন নামে একজন পরহেজগার মুসলমানের নামানুসারে কালিশুরী হাইস্কুলের নাম কালিশুরী সায়েদুল আরেফিন ইনস্টিটিউশন রাখা হয়। তাঁর দরগাহে বহু ভক্ত মাজার জেয়ারত করতে আসেন।
এ উপজেলায় প্রাচীন ও বর্তমান কালের স্থাপত্য নিদর্শনসহ বহু মসজিদ ও মন্দির রয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস